সাভারে ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনে শহিদ পরিবারের দায়ের করা একাধিক হত্যা মামলায় সাভার উপজেলা শ্রমিকলীগ নেতা সালাম ফরাজী ওরফে ফরাজকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) ভোররাতে সাভারের মজিদপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে ফরাজকে গ্রেফতার করা হয়। তিনি সাভার পৌর এলাকার মজিদপুর মহল্লার সাদেক আলী ফরাজির ছেলে এবং সাভার উপজেলা চেয়ারম্যান মঞ্জুরুল আলম রাজীবের সহযোগী হিসেবে পরিচয় দিয়ে এলাকায় প্রভাব বিস্তার করতেন।
সাভার মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) কাদের শেখ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ৫ আগস্ট স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে গ্রেফতার এড়াতে রাতারাতি ছদ্মবেশ ধারণ করে বিএনপির এক নেতাকে ম্যানেজ করে এতদিন পলাতক ছিলেন সালাম ফরাজি। ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে নিহতদের স্বজনরা বেশ কিছু মামলা করেছেন। ওই মামলায় এজাহারভুক্ত আসামি সালাম ফরাজী।
বুধবার দিবাগত বৃহস্পতিবার ভোররাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সাভার পৌর এলাকার মজিদপুর এলাকা থেকে সাভার মডেল থানা পুলিশের বিশেষ অভিযানে সালাম ফরাজীকে গ্রেফতার হয়।
পুলিশ জানায়, সালাম ফরাজির বিরুদ্ধে ডাকাতি, চাঁদাবাজি, জমি দখল, নারী নির্যাতন, মারধরের পর হত্যাচেষ্টাসহ প্রতারণার একাধিক মামলা রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, চক্রের প্রধান ফরাজের পালিত লোকজন রাজধানী, সাভার, আশুলিয়া, ধামরাইসহ বিভিন্ন এলাকার বাসস্ট্যান্ড ও রেলস্টেশন এলাকায় ঘোরাফেরা করে। সহজ-সরল যাত্রীদের টার্গেট করে ডাব, কোমল পানীয় কিংবা পানির সঙ্গে বিষাক্ত চেতনানাশক ওষুধ খাওয়ানোর চেষ্টা করে। আবার কখনও বাস ও ট্রেনে যাত্রীদের পাশে বসে তাদের নাকের কাছে চেতনানাশক ওষুধ ভেজানো রুমাল দিয়ে ধরে যাত্রীদের অজ্ঞান করে থাকে। বিষাক্ত পানীয় সেবন করার বা বিষাক্ত স্প্রের ঘ্রাণ নেওয়ার পর যাত্রী অজ্ঞান হয়ে পড়লে তার সর্বস্ব কেড়ে নিয়ে তারা ভিড়ের মধ্যে মিশে যায়। এমন অপকর্ম করে পুলিশের হাতে একাধিকবার গ্রেফতার হয়ে হাজতবাস করেন সালাম ফরাজি। গত ৫ আগষ্টের পর নিজেকে বিএনপি’র সমর্থক দাবি করে প্রচার করতে শুরু করেন এই প্রতারক। তবে বিএনপির শীর্ষ স্থানীয় নেতারা তাকে দালাল আখ্যায়িত করে তার সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানান। এদিকে ফরাজের গ্রেফতারের খবরে স্বস্তি প্রকাশ করে পুলিশের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন সাভারের সাধারণ জনগণ ও ভুক্তভোগীরা।
সাভার মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ জুয়েল মিঞা বলেন, ‘সালাম ফরাজীর বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নিহত পরিবারের পক্ষ থেকে হত্যা মামলা করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে নিহতের স্বজনদের দায়েরকৃত ২ টি হত্যা মামলার তথ্য পাওয়া গেছে। এছাড়াও ফরাজের বিরুদ্ধে রাজধানীর মোহাম্মদপুরসহ বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে।
প্রসঙ্গত, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীরা গত ৪ ও ৫ আগস্ট সাভারে জমায়েত হতে থাকেন। এ সময় স্বৈরাচার শেখ হাসিনার অন্যতম সহযোগী সাভার উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান মঞ্জুরুল আলম রাজীব এবং ঢাকা-১৯ আসনের সাবেক এমপি সাইফুল ইসলাম নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়েন। এ ঘটনায় সাভার আশুলিয়ায় শতাধিক ছাত্র-জনতা শহিদ হন। শহিদের স্বজনরা পরবর্তীতে মামলা করেন। এসব মামলায় আসামিদের ধরতে তৎপর রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।