একটি নতুন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সুযোগ করে দিয়েছে বিপ্লবী ছাত্র সমাজ। তারা ফ্যাসিস্ট সরকারের গুলির মুখে দৃঢ়তার সঙ্গে দাঁড়িয়েছিলেন। পিছু হটেননি। প্রশাসনের গুলি কখনো হজম করে কখনো এড়িয়ে চলে এগিয়ে গেছেন সামনের দিকে। প্রাণ হারিয়েছেন শত সহস্র।
এখনো গুলিবিদ্ধ অসংখ্যা ছাত্র-জনতা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এই যে এতো প্রাণ উৎসর্গ, পঙ্গুত্ব কেন? মানুষ আসলে কোনো অপশাসন চাচ্ছে না। মানুষ যাচ্ছে সু-শাসন। বৈষম্যহীন সমাজ ব্যবস্থা।
ঘুস-দুর্নীতি ও অনিয়ম মুক্তি একটি সম্প্রীতির সমাজ ব্যবস্থা। যেখানে কোনো অনিয়ম থাকবে না। ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য কমবে। ধনিরা আরও ধনী ও গরিবরা আরও গরিব হওয়ার ভারসাম্যহীণ অর্থনৈতিক ব্যবস্থা থাকবে না। কিন্তু এমন একটি সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য কী দরকার? এমন প্রশ্ন প্রথমেই সামনে চলে আসে।
আমরা যদি চিন্তা করি তাহলে প্রথম চিন্তাই করতে হবে সামগ্রিক ঐক্য নিয়ে। এই ঐক্য শুধু রাজনৈতিক নয়, সব শ্রেণি-পেশার মানুষের ঐক্য। দেশের উন্নয়ন অগ্রগতি ও নিরাপত্তা রক্ষায় সব শ্রেণি-পেশার ঐক্যের বিকল্প নেই। একটি প্রতিষ্ঠানের সাফল্য শুধু মালিক বা উদ্যোক্তার ওপর নির্ভর করে না, নির্ভর করে ওই প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা থেকে শুরু করে ক্লিনার পর্যন্ত সব শ্রেণির কর্মকর্তার আন্তরিক পরিশ্রম ও প্রানান্তকর প্রচেষ্টার ওপর।
তেমননি যদি আমরা একটি সমাজ বা রাষ্ট্রকে যদি বিশ্বের দরবারে উচ্চতায় নিয়ে আসতে চাই সেক্ষেত্রেও একই নিয়ম। রাষ্ট্রের পলিসিমেকার থেকে শুরু করে ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য। প্রধান নির্বাহী (প্রধানমন্ত্রী/প্রধান উপদেষ্টা) থেকে শুরু করে ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠী পর্যন্ত সব পর্যায়ের মানুষের ঐক্য দরকার।
সব দল মত ও শ্রেণি পেশার মানুষের মধ্যে যদি আমরা ঐক্য গড়ে তুলতে পারি তাহলে আমরা অবশ্য একটি নতুন বাংলাদেশেই পাবো না, আমরা পাবো সাম্য-সম্প্রীতির এক মহাসম্মিলনের বাংলাদেশ। যে বাংলাদেশ কোনো বিশেষ ব্যক্তি বা পরিবারের বাংলাদেশ হবে না। বাংলাদেশ হবে সব মত ও পথের মানুষের।
জুলাই বিপ্লবপরবর্তী নতুন এক বাংলাদেশ পেয়েছে। সেই ১৭৫৭ সালের পলাশী ট্র্যাজেডির পর থেকে স্বাধীনতা সংগ্রাম করে আসছে বাংলাদেশ। ২৫০ বছর সময় ধরে করে আসা স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের সংগ্রাম এখনো করে যেতেই হচ্ছে। আড়াইশ বছরের স্বাধীনতা ইতিহাসে জুলাই বিপ্লব ছিল বাংলাদেশের প্রকৃত আধিপত্যবাদ এবং সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী বিপ্লব। এই ঐতিহাসিক বিপ্লবকে ধরে রাখতে প্রয়োজন জাতীয় ঐক্য। যে ঐক্যের ওপর রচিত হবে পরবর্তী বাংলাদেশের গন্তব্য। পরবর্তী প্রজন্মের চেতনাও গড়ে উঠবে সেই ঐক্যকে কেন্দ্র করেই।
স্বাধীন বাংলার জাতীয় ঐক্যের ঘোষণা পত্রে থাকতে হবে-
ক. বাংলাদেশের জাতীয় চেতনা হবে আধিপত্যবাদ এবং সাম্রাজ্যবাদবিরোধী সাম্য ও সম্প্রীতির।
খ. বাংলাদেশের প্রতিবেশী দেশ এবং নিকটবর্তী দেশসমূহের সঙ্গে সম্পর্কের ভিত্তি হবে সমতা।
গ. শেখ মুজিবুর রহমানের বাকশাল এবং শেখ হাসিনার ফ্যাসিজমকে ইতিহাসের নিষিদ্ধতম অধ্যায় ঘোষণা করতে হবে।
উপরোক্ত তিনটি ঘোষণা ও নীতিমালার আলোকে বাংলাদেশ জাতীয় ঐক্যের ভিত্তি রচিত হতে পারে। এটি সম্ভব হলে আমরা নতুন বাংলাদেশ বা সম্প্রীতির বাংলাদেশের স্বাদ পাওয়ার সুযোগ পাব।
লেখক: হাসান আল বান্না, কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক