ফারুক আহমেদ সিরাজগঞ্জ(সলঙ্গা) প্রতিনিধিঃ কে না শুনেছে এই প্রবাদবাক্য- মাঘের শীতে বাঘ পালায়! কিন্তু সাম্প্রতিককালে এসে সব কিছু ওলটপালট হয়ে যাচ্ছে। একই নিয়মে বদলে গেছে প্রকৃতির আচার আচরণ। শীতকালে এখন আর আগের মতো ঠান্ডা অনুভূত হয় না। একই কারণে ‘মান সম্মান’ খুইয়েছে মাঘ। দাপট কমে যাওয়ায় এ মাসটিকেও কেউ আর তেমন পাত্তা দিতে চায় না। কেন পাত্তা দেবে? এখন মাঘ মাসের শীতে বাঘ তো দূরের কথা, বিড়ালও যে জায়গা বদল করে না! অথচ একসময় মাঘের চরিত্রই ছিল আলাদা শীত কাকে বলে? উহা কত প্রকার ও কী কী? অন্তত এই মাসে তা হাড়ে হাড়ে টের পাওয়া যেত। মাঘের শীত আসলে কত ভয়াবহ হয় সেটি বোঝাতেই বলা হতো মাঘের শীতে বাঘ পালায়। বাস্তবে শীতের সঙ্গে বাঘের আলাদা কোনো লড়াই সংগ্রামের ইতিহাস চোখে পড়ে না। তবে বাঙালি ‘বিপুল শক্তিধর’ বা ‘ক্ষমতাবান’ অর্থে ‘বাঘ’ শব্দটি ব্যবহার করে থাকে। অনুমান করা যায়, অভিন্ন ভাবনা থেকে মাঘের সঙ্গে বাঘের গল্প জুড়ে দেওয়া হয়েছিল। বলার চেষ্টা করা হয়েছিল, বাঘের মতো অতি সাহসী পশুটিও মাঘের শীতের কাছে কুপোকাত হয়ে যায়।
তো, সেই মাঘ চলছে এখন। চলছে যে, টের পাচ্ছেন নিশ্চয়ই। হ্যাঁ, লম্বা সময় পর এবার মাঘের শীত অনুভূত হচ্ছে দেশে। পৌষ শেষ হতে না হতেই মাঘের অনুপ্রবেশ ঘটেছিল। তখন থেকে তীব্র শীত। মাঘ শুরুর পর তা আরও বেড়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গ্রামীণ জনপদে দিন রাতের পার্থক্য করা মুশকিল হয়ে গেছে। কী দিন, কী রাত সব সময়ই শীত। অনেক বেলা পর্যন্ত ঘন কুয়াশা। কাছের দৃশ্যও স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে না। অনবরত শিশির ঝরছে। মুখ দেখানোর সুযোগ পাচ্ছে না সূর্য। এ অবস্থায় হঠাৎ দুর্ভোগে পড়ে গেছে গ্রামের মানুষ। বিশেষ করে উত্তরবঙ্গে মত সিরাজগঞ্জ সলঙ্গাতে মাঘ শেষ মহরতে বাঘের মতোই হামলে পড়েছে। সলঙ্গার গ্রামগঞ্জের মানুষজনও বিশেষ কষ্ট পাচ্ছে শীতে। শহরাঞ্চলের চিত্রটা আলাদা করে বলার মতো। ‘শীত নেই’, ‘গরম লাগছে তো’ বলে মানুষেরা এখন ভালো করে নাখ মুখ ঢেকে পথ চলছে। পকেট থেকে হাত সহজে বের করছে না। শীত উপভোগের কথা ভুলে মোকাবিলায় মন দিয়েছে। কারণ গত বুধবার গ্রামগঞ্জে সকাল ৯ টা পর্যন্ত সূর্যের দেখা নেই। গরমাগরম অবস্থা দূর হয়ে গেছে। কনকনে ঠান্ডা সর্বত্র। কাজ না থাকলে অনেকে আর ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। দরজা জানালা সব বন্ধ করে উষ্ণতার খোঁজ করছে। চালু আছে রুমহিটারও। ঠান্ডার ভয়ে অনেকে গোসল পর্যন্ত ছেড়ে দেয়ার গল্পও কানে আসছে অহরহ! রাস্তার পাশে খড়কুটা দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে মাঘের শেষে এসে শীত নিবারনের চেষ্টা চলছে সলঙ্গা আমশড়া বাসিদের।