মোঃ জুনায়েদ খান সিয়াম, নিজস্ব প্রতিনিধিঃ সু-খবর, সু-খবর, সু-খবর! প্রতিদিন মাইকের উচ্চ আওয়াজে ঘুম ভাঙে বরিশাল জেলার উজিরপুর উপজেলার অধিকাংশ বাসিন্দার। বিভিন্ন পণ্যের অফার, কম মূল্যে বৈদ্যুতিক লাইট ও ডিটারজেন্টসহ নিম্নমানের খাদ্যপণ্য ভ্রাম্যমাণ গাড়িতে বিক্রি, পোলট্রি মুরগির মূল্য হ্রাস, সামুদ্রিক মাছ ও উন্নত জাতের গরুর মাংস বিক্রি, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সেবা এবং নানা সুযোগ-সুবিধার সুখবর, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি, কোচিং, দোকান, হোটেল, বিরিয়ানি এবং শোরুম উদ্বোধনের উচ্চ শব্দে মাইকিংয়ে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। সূর্য উদয়ের পর থেকে শুরু হয়ে রাত ১০-১১ টা পর্যন্ত মাইকের উচ্চ আওয়াজের সুখবর শুনতে শুনতে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন উপজেলার মানুষ। প্রতিনিয়ত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান প্রচারের নামে উচ্চ শব্দে মাইকিং করে শব্দদূষণ করলেও, কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না উপজেলা প্রশাসন। এর ফলে বিপাকে পড়েছেন এলাকার রোগী, শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ।
চিকিৎসকরা বলছেন, মানুষের শ্রবণের জন্য শব্দের ৪৫ ডেসিবেল সহনীয় মাত্রা। তবে ৭০ ডেসিবেল অতিক্রম করলে তা ক্ষতিকর। উপজেলা শহরে প্রতিনিয়ত যে হারে মাইকিং করা হয়, তাতে শব্দের মাত্রা ৭০ ডেসিবেলের কাছাকাছি চলে যায়। বিশেষ করে শিশুদের জন্য এটা অত্যন্ত ক্ষতিকর।
জানা গেছে, উপজেলা শহরে বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার এবং বেসরকারি কিন্ডার গার্ডেন স্কুল, ক্যাডেট মাদ্রাসা ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এসব বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে রোগী দেখতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা আসেন। ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিকরা রোগীদের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য এসব চিকিৎসকের আসার কথা জানিয়ে মাইকিং করেন।
এছাড়াও, বেসরকারি কিন্ডার গার্ডেন স্কুল, ক্যাডেট মাদ্রাসা ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলো বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা প্রদানের অঙ্গীকার জানিয়ে ছাত্র-ছাত্রী ভর্তির জন্য উচ্চ শব্দে মাইকিং করছেন প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ। প্রযুক্তির যুগে এখন আর ঘোষকের দরকার পড়ে না। ঘোষণাটি একবার রেকর্ড করে রিকশা বা ব্যাটারীচালিত অটোতে একটি কিংবা কখনো দুটি মাইক বেঁধে দিনভর চলে এসব ‘সু-খবর’ এর ঘোষণা। সঙ্গে উচ্চ আওয়াজের মিউজিকও থাকে। এতে অনেকে বিরক্ত হয়ে বাধ্য হয়ে কানে আঙুল দিয়ে পথ চলেন। এর ফলে মারাত্মকভাবে শব্দদূষণসহ ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে মাইকিংয়ের সঙ্গে যুক্ত এক অটোগাড়ির চালক বলেন, মাইকিংয়ের জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মালিকরা তাদের দৈনিক ৬৫০-৮০০ টাকা দেন। বিপরীতে, সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যা রাত ৭-৮টা পর্যন্ত মাইকিং করেন তারা। উপজেলার ব্যবসায়ী মোঃ সফিক বলেন, প্রতিনিয়ত মাইকিংয়ের কারণে ব্যবসা পরিচালনায় মারাত্মক ব্যাঘাত ঘটছে।
শব্দদূষণের জন্য প্রচলিত আইন থাকলেও, তারা তা মানছে না। উজিরপুর বন্দরের বাসিন্দা সজীব সহ একাধিক বাসিন্দা বলেন, প্রতিদিন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত পণ্য বিক্রি ও সেবার সুযোগ-সুবিধা নিয়ে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান উচ্চ শব্দে মাইকিং করে শব্দদূষণ করছে। মাইকের যন্ত্রণাদায়ক শব্দের কারণে নামাজ আদায়সহ স্বাভাবিক কাজকর্ম করা কঠিন হয়ে পড়েছে। যত্রতত্র এসব উচ্চ শব্দের মাইকিংয়ের ফলে, স্থানীয় প্রশাসনের প্রচারিত অনেক সরকারী গুরুত্বপূর্ণ বার্তাও সাধারণ মানুষ বুঝতে পারেন না।
এসব উচ্চ শব্দের মাইকিং বন্ধে প্রশাসনের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেন তারা। উজিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ শওকত আলী বলেন, শব্দদূষণের কারণে দুশ্চিন্তা, উগ্রতা, উচ্চ রক্তচাপ, শ্রবণশক্তি হ্রাস, ঘুমের ব্যাঘাতসহ নানা ক্ষতিকর ও বিরূপ প্রতিক্রিয়া ঘটতে পারে।
এছাড়াও, অন্যান্য শারীরিক প্রতিক্রিয়া হিসেবে স্মরণশক্তি হ্রাস, মানসিক অবসাদ হতে পারে। প্রতিনিয়ত শব্দদূষণে শিশুদের মানসিক বৃদ্ধি মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হয়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোঃ আলী সুজা বলেন, উচ্চ শব্দে মাইকিংয়ের বিষয়টি আমার নজরে এসেছে। উচ্চ শব্দে মাইকিং বন্ধে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের তালিকা তৈরি করে সতর্কতামূলক চিঠি প্রেরণ করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। চিঠি প্রাপ্তির পর, আইন লঙ্ঘন করে একই কাজ করলে তাদের বিরুদ্ধে প্রচলিত আইনে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।