ভোলার চরফ্যাশনের দুলারহাট থানার ঘোষেরহাট থেকে পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলার হাজিরহাট নৌরুটে ফেরি চলাচল কার্যক্রমের সম্ভাব্যতা যাচাইকল্পে পদক্ষেপ নিয়েছে বিআইডব্লিউটিএ।
এ লক্ষ্যে সম্প্রতি বিআইডব্লিউটিএ থেকে সংশ্লিষ্ট (ভোলা, পটুয়াখালী ও বরিশাল) ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য রুটটি সরেজমিন পরিদর্শনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিআইডব্লিউটিএ চেয়ারম্যান কার্যালয়ের উচ্চপদস্থ একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা গত ৮ মে এ নির্দেশনাপত্র দিয়েছেন। পত্রে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে রুটটি পরিদর্শনপূর্বক মতামত দিতে বলা হয়েছে। বিআইডব্লিউটিএ বরিশাল অফিস সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
জানা গেছে, এ বিষয়ে এর আগে নৌ-পরিবহণ উপদেষ্টা, সিনিয়র সচিব ও বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান বরাবরে লিখিত আবেদন করেছেন স্থানীয়রা।
চরফ্যাশনের ঘোষেরহাট ঘাটের যাত্রী সাংবাদিক শাহাজাদা বলেন, দক্ষিণাঞ্চলের লোকজনের জন্য ফেরি খুবই দরকার। উন্নত চিকিৎসার জন্য এখানের মানুষ জেলা সদর ভোলা কিংবা মূল ভূখণ্ড বরিশালে আসা-যাওয়া করার ক্ষেত্রে জীবন ঝুঁকি নিয়ে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। প্রতিদিনই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ছোট ট্রলার ও স্পিডবোটে প্রমত্তা তেঁতুলিয়া নদী পাড়ি দিতে হচ্ছে এই দুই উপজেলার লোকজনকে। ফেরিটি চালু হলে সহজ হবে মানুষের যোগাযোগ। উপকৃত হবে দুই উপজেলার লাখ লাখ মানুষ। সাশ্রয়ী হবে পণ্য পরিবহণ ব্যবস্থা। এসব বিবেচনায় বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ উল্লেখিত রুটে ফেরি চালু করার বিষয়ে ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ করায় এলাকাবাসী আশায় বুক বেঁধেছেন।
চরফ্যাশন উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসেন আলমগীর মালতিয়া বলেন, চরফ্যাশন উপজেলার ঘোষেরহাট লঞ্চঘাট ও পটুয়াখালীর জেলার দশমিনা উপজেলার হাজিরহাট লঞ্চঘাটের মধ্যে ফেরি চলাচলের দাবি এই দুই উপজেলার ১০ লাখ মানুষের। তারা মনে করেন চরফ্যাশন উপজেলার ঘোষেরহাট এবং দশমিনা উপজেলার হাজিরহাট এলাকাটি ভোলা সদর কিংবা বরিশাল সদর থেকে শতাধিক কিলোমিটারেরও বেশি দূরত্বে ও দুর্গম। যার কারণে এখানকার বাসিন্দাদের সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, এখানকার উৎপাদিত কৃষিপণ্য, আহরিত ইলিশ মাছসহ অন্যান্য মৎস্য সম্পদ কিংবা সাধারণ মানুষ পরিবহণ যথেষ্ট কষ্টসাধ্য, সময়সাপেক্ষ ও ব্যয়বহুল। ঘোষেরহাট-হাজিরহাট রুটে ফেরি চালু হলে পদ্মা সেতু হয়ে সহজে ঢাকা যাওযা সম্ভব হবে, যা যোগাযোগ ও ব্যবসায়িক কার্যক্রমে বড় পরিবর্তন আনবে।
চরফ্যাশন উপজেলা যুবদল নেতা আশ্রাফুর রহমান দিপুফরাজী বলেন, ঘোষেরহাট থেকে হাজিরহাট পর্যন্ত ফেরি সার্ভিস চালু করা দুই উপজেলার হাজার হাজার মানুষের প্রাণের দাবি। এটি বাস্তবায়নে বর্তমান সরকারের আন্তরিক পদক্ষেপ প্রত্যাশা করছি।
দশমিনা সরকারি আবদুর রশিদ ডিগ্রি কলেজের বাংলা প্রভাষক মো. আবু জাফর বলেন, এই ফেরি সার্ভিসটি চালু হলে ভোলা ও পটুয়াখালী জেলার পরস্পর সংযোগ স্থাপনে ভূমিকা রাখবে ।
চরফ্যাশন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাসনা শারমিন মিথি বলেন, চরফ্যাশনের ঘোষের হাট এবং দশমিনার হাজিরহাটের রুটে ফেরি চলাচল এখন সময়ের দাবি।
দশমিনা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইরতিজা হাসান বলেন, ফেরির বিষয়ে সরকার সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের ব্যাপারে চিঠি দিয়েছে। আমরা এ নিয়ে কাজ করছি। ফেরি চালু হলে দুই অঞ্চলের যাত্রী পারাপারের পাশাপাশি কৃষকদের উৎপাদিত পণ্য পরিবহণে প্রত্যাশিত সাফল্য আসবে। এছাড়া বঙ্গোপসাগর থেকে আসা তেঁতুলিয়া নদী সব ঋতুতেই উত্তাল থাকে। তাই নিরাপদ ফেরি চলাচল নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি।