চট্টগ্রাম প্রতিনিধি ।।ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম পীর সাহেব চরমোনাই কোটা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যারা শহীদ হয়েছেন তাদের রূহের মাগফিরাত এবং আহতদের দ্রুত সুস্থ্যতা কামনা করে বলেন, দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বর্বর ও নৃশংস আওয়ামী দুঃশাসন উৎখাতের সংগ্রামের সূচনা করেছে আমাদের গর্ব শিক্ষার্থী সমাজ। তাদের অসীম সাহস, ত্যাগ ও বুদ্ধিদীপ্ত নেতৃত্ব আমাদের গর্বিত করেছে। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ শুরু থেকেই এই আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত থেকেছে। ১৯ জুলাইতেই আমরা পরিস্কার করে জানিয়েছি যে, সরকারের পদত্যাগই একমাত্র সমাধান। শুরু থেকেই নানা মাত্রায় ও নানা ধরণে ইসলামী আন্দোলনের নেতা-কর্মীরা এই আন্দোলনে অংশ নিয়েছে। সেজন্য আমরা গর্ব বোধ করি যে, নৃশংস এক জালিমের পতনের মহান বিপ্লবে আমরা ভূমিকা নিতে পেরেছি। আমাদেরও অনেক ভাই জীবন দিয়েছেন এবং আহত হয়েছেন।
তিনি আরো বলেন, সুন্দর একটি বাংলাদেশ দেখার প্রত্যাশা করছে দেশবাসী। শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবি না মেনে খুনি হাসিনা সরকার নির্বিচারে পাখির মতো গুলি করে হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে। এই বর্বর হত্যাযজ্ঞ দেখে আমরা ঘরে বসে থাকতে পারিনি। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সর্বস্তরের মানুষ ছাত্র-ছাত্রীদের আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন। তিনি বলেন, খুনি হাসিনাসহ সকল হত্যাকারী, বিদেশে অর্থপাচারকারী, দুর্নীতিবাজদের বিচার করতে হবে। পাচারকৃত অর্থ দেশে ফিরিয়ে এনে বাজেয়াপ্ত করতে হবে। সুন্দর একটি বাংলাদেশ দেখার প্রত্যাশা করছেন দেশবাসী। বিগত জালেম সরকারের নির্বাচন কমিশনে জড়িতদের বিচার করে জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করতে হবে। দেশের সংখ্যালঘুদের জান-মাল ধর্মীয় উপাসনালয়ের নিরাপত্তা দেয়া ঈমানী দায়িত্ব বলেও তিনি উলেখ করেন।
আজ ১০ আগস্ট ২০২৪ (শনিবার), বিকালে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ চট্টগ্রাম মহানগরীর উদ্যোগে ঐতিহাসিক লালদীঘি ময়দানে ছাত্র-জনতার অভ্যূত্থান পরবর্তী রাষ্ট্র সংস্কারে ঘোষিত ৯ দফা প্রস্তাবনা বাস্তবায়নে বিশাল গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি উপরোক্ত কথা বলেন।
সংগঠনের চট্টগ্রাম মহানগর সভাপতি আলহাজ্ব মোহাম্মদ জান্নাতুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত গণসমাবেশে বিশেষ অতিথি ছিলেন, দলের মহাসচিব প্রিন্সিপাল হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ, কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা, অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, কেন্দ্রীয় আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক, প্রফেসর ড. বেলাল নুর আজিজ, কেন্দ্রীয় সহকারী সাংগঠনিক সম্পাদক, মুফতী দিলাওয়ার হোসাইন সাকী, কেন্দ্রীয় সদস্য ও নগর সেক্রেটারী আল মুহাম্মদ ইকবাল, ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সেক্রেটারী জেনারেল মুহাম্মদ মুনতাসির আহমদ, প্রচার সম্পাদক, ইউছুফ মালিক, জাতীয় ওলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদ চট্টগ্রাম মহানগরের সেক্রেটারী মাওলানা মুফতী গোলাম কিবরিয়া শরীফী, জাতীয় শিক্ষক ফোরাম চট্টগ্রাম মহানগরের সভাপতি মাওলানা দিদারুল মাওলা, ইসলামী শ্রমিক আন্দোলন চট্টগ্রাম মহানগর সভাপতি, শ্রমিক নেতা ওয়ায়েজ হোসেন ভূঁইয়া, ইসলামী যুব আন্দোলন চট্টগ্রাম মহানগরের সভাপতি আল মিজান মোহাম্মদ নোহেল, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ চট্টগ্রাম মহানগরের সভাপতি মুহাম্মদ ইবরাহীম খলিল প্রমুখ
১.অনতিবিলম্বে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় এমন সকল রাজনৈতিক দল, পেশাজীবি ও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধিদের সাথে পরামর্শক্রমে অনুর্ধ্ব ১৫ সদস্য বিশিষ্ট অর্ন্তর্র্বতীকালীন সরকার গঠন করতে হবে। যার মেয়াদ ৬ মাসের বেশি হতে পারবে না।
২. অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের কেউ পরবর্তী নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না।
৩.গ্রহণযোগ্য তদন্ত কমিশন ও স্বতন্ত্র ট্রাইবুনাল গঠন করে জুলাই গণহত্যাকান্ডের বিচার করতে হবে। একই সাথে গত ১৬ বছরে সংগঠিত সকল রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক হত্যাযজ্ঞ, গণহত্যা, গুম ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিচার করতে হবে। তদন্ত সাপেক্ষে আহত/নিহত পরিবারকে ক্ষতিপূরণসহ পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। এক্ষেত্রে যে সকল ব্যক্তি বা সংগঠন দোষী সাব্যস্ত হবে, তাদেরকে রাজনীতি ও নির্বাচন থেকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধ করতে হবে।
৪. তদন্ত সাপেক্ষে গত ১৬ বছরে সকল দুর্নীতিবাজ ও বিদেশে অর্থ পাচারকারীদের সকল সম্পত্তি ক্রোক করে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা করতে হবে এবং বিদেশে পাচারকৃত টাকা ফেরত আনবার উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। বিগত ১৬ বছরে যারা ক্ষমতায় ছিলেন তাদের সম্পদের হিসাব দিতে হবে। সকল দুর্নীতি ও টাকা পাচারের শ্বেতপত্র প্রকাশ করতে হবে।
৫.আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, প্রশাসন, বিচার বিভাগসহ প্রজাতন্ত্রের যে সকল কর্মচারী আইন, সংবিধান, শপথ লঙ্ঘন করে অপেশাদার আচরণ করেছেন তাদেরকে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।
৬.দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠির চিন্তা-চেতনা ও অনুভূতির বিরুদ্ধে কোন সিদ্ধান্ত নেয়া যাবে না।
৭.নির্বাচন কমিশনকে পুনর্গঠন করতে হবে এবং অবাধ, সুষ্ঠ গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন পদ্ধতি (চ.জ) চালু করতে হবে। বিগত ৩টি নির্বাচন বাতিল করতে হবে এবং নির্বাচনের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলকে বিচারের আওতায় আনতে হবে।
৮.আওয়ামী দুঃশাসনের বিগত ১৬ বছরে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে এদেশের সাধারণ শিক্ষাখাতের মান ও নৈতিকতা। এই ক্ষতি দ্রুত সময়ের মধ্যে কাটিয়ে উঠার লক্ষ্যে দেশপ্রেমিক শিক্ষাবিদ ও উলামায়ে কেরামের সমন্বয়ে একটি জাতীয় শিক্ষাকমিশন গঠন করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
৯. উলামায়ে কেরাম জাতির ধর্মীয় নেতৃত্ব প্রদান করেন। তারা উম্মাহর ঈমান-আমল রক্ষায় কাজ করেন। সেজন্য অন্তর্র্বতীকালীন সরকারে উলামায়ে কেরামদের মধ্যে থেকে প্রতিনিধি অবশ্যই থাকতে হবে।
10.