ওয়াজ মাহফিল ও নারীদের বোরকা পরা নিয়ে শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক সৈয়দ জামিল আহমেদের আপত্তিকর মন্তব্যের প্রতিবাদে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থীরা।
বুধবার বেলা সাড়ে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারসংলগ্ন সড়কে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালকের পদত্যাগের দাবি করেন শিক্ষার্থীরা। পরে মানববন্ধন শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন তারা৷
মানববন্ধনে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন এবং অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের ৪৮তম ব্যাচের শিক্ষার্থী বনি আমিন বলেন, সৈয়দ জামিল আহমেদ ইসলাম ধর্মের ওয়াজ মাহফিল ও পর্দাকে কটূক্তি করেছেন। তিনি ইসলামি শরিয়তকে ব্যাকডেটেট বলেছেন। তাকে অনতিবিলম্বে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে। সে যদি ক্ষমা না চায় তাহলে আমরা কঠোর কর্মসূচিতে যেতে বাধ্য হবো। একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে এ ধরনের লোকের থাকার গ্রহণযোগ্যতা নেই। অতিদ্রুত তার পদত্যাগের দাবি জানাচ্ছি।
ফার্মেসি বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আবু উবায়দা উসামা বলেন, দ্বিতীয় স্বাধীনতার পর প্রকাশ্যে ইসলাম নিয়ে কটূক্তি করে আমাদের হৃদয়ে আঘাত দেওয়া হয়েছে। সৈয়দ জামিল আহমেদের এই সাহসের পেছনে কারা রয়েছে, কারা জড়িত আছে- এটা বের করতে হবে। মুসলমানদের সেন্টিমেন্টে আঘাত দিয়ে মন্তব্য করার জন্য সবার সামনে তাকে ক্ষমা চাইতে হবে এবং দ্রুত সময়ের মধ্যে পদত্যাগ করতে হবে।
উল্লেখ্য, গত শনিবার সন্ধ্যায় বেইলি রোডের মহিলা সমিতি মিলনায়তনে বক্তব্য দেন অধ্যাপক ড. সৈয়দ জামিল। ‘বিক্ষুব্ধ থিয়েটারকর্মীগণ’ নামে একটি প্লাটফর্ম আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় সমসাময়িক থিয়েটারচর্চা নিয়ে নানা কথা বলেন তিনি।
বক্তব্যের এক পর্যায়ে ওয়াজ-মাহফিলের বিরুদ্ধে নাট্যকর্মীদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে সৈয়দ জামিল আহমেদ বলেন, ‘আমরা কীভাবে ওয়াজ-মাহফিলের বিরুদ্ধে আমাদের নাটকটাকে আরও জোরদার করতে পারি-এই কাজগুলো করতে হবে আমাদের। আমাদের অভিনয়ের মান, প্রযোজনার মান বাড়াতে। এই জায়গাগুলো যদি আমাদের ঠিক থাকে, দর্শক যদি আসে বাদবাকি জায়গাগুলো আমরা রাষ্ট্রের কাছে চাইলে, জনগণবান্ধব রাষ্ট্র আছে আমাদের কাছে, ভয় পাওয়ার দরকার নেই। আমাদের বলার দরকার যে, এই জায়গাগুলো আমাদের দরকার।’
নারীদের বোরকা নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করেন শিল্পকলা একাডেমির নতুন মহাপরিচালক। তিনি বলেন, ‘‘আমি যদি সুযোগ পাই, আমি চাইব যেন সেখানে জামায়াত আসে। এজন্য জামায়াত বলুক না, কেন মেয়েকে এখনো ২০২৪ সালে বোরকা পরতে হবে। তারা আমাদের…. কনভিন্স করবে কেন ২০২৪ সালে শরীয়তি রাষ্ট্রব্যবস্থা দরকার। কারণ কুরআনে বলা আছে, ‘তুমি তোমার কোনো নারীর দিকে চোখ পড়লে দৃষ্টি নামাও’। তো আমি যদি দৃষ্টিটা নামাই, তাহলে আমি যদি সংযত হই, আমি যদি দৃষ্টির লাগাম ধরি, তাহলে কেন নারীকে মাথায় বোরকা দিতে হবে? এই কথাটার উত্তর জামায়াতকে দিতে হবে এবং সেটা দাবি করতে হবে”।
সৈয়দ জামিল আহমেদের এ বক্তব্য ঘিরে ব্যাপক সমালোচনা চলছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। এরই মধ্যে তাকে ‘স্বৈরাচারের দোসর’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।